বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে তিনটি অংশ ছিল : আমির হোসেন আমু

651

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে তিনটি অংশ ছিল। বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিলো বলে আবারো দাবী করেছেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু।

রোববার (১৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে ৩১ তম মু্ক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘বিজয় মঞ্চ’ থেকে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে আমির হোসেন আমু এ কথা বলেন।

আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের তিনটি অংশ ছিল জানিয়ে আমির হোসেন আমু বলেন, প্রথম অংশে তিনি ব্যখ্যা করেছিলেন, পাকিস্তানের ২৩ বছরের শাসন-শোষন ও নির্যাতনের ইতিহাস। ২য় অংশে তিনি বললেন ১লা মার্চ থেকে ৭ই মার্চ কিভাবে জুলুম-নির্যাতন করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে তার চিত্র। ৩য় অংশে এসে তিনি বললেন, আগামী দিনের করণীয় সম্পর্কে।

আমির হোসেন আমু বললেন, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষনের পরে, বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লো। দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের মাধ্য দিয়ে ত্রিশ লাখ শহীদের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বলেছিলেন আমি যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা এনেছি সেই স্বাধীনতা মলিন হয়ে যাবে যদি আমি অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে না পারি। সেই অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু যখন তৃতীয় বিপ্লবের ডাক দিলে ঠিক সেই সময় তাকে স্ব-পরিবারে হত্যা করা হলো।

জিয়াউর রহমানের রাজনীতির সমালোচনা করে বর্ষীয়ান এই নেতা বলেন, ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আমরা যখন এগিয়ে যাচ্ছিলাম জিয়াউর রহমান তখন ঘোষণা দিয়েছিল আমি রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে দিব। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সাড়ে তের হাজার সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে মুক্তি দিয়েছিল। আমাদের সংবিধানে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির কোনো কথা না থাকলেও সেই অনুচ্ছেদ যুক্ত করে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বীজ বপন করেছেন।

শেখ হাসিনার স্বদেশপ্রত্যাবর্তানের কথা স্বরন করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কঠিন এক সময়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করে আনার পর তিনি দলের হাল ধরলেন। যতই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন ততই তার প্রাণনাশের হুমকি দিন দিন বেড়ে গেল। ঘাতকরা যেমন ১৫ আগষ্টের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে তৎপর বঙ্গবন্ধু কন্যাও ঠিক তেমনি পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন। তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগনকে সাথে নিয়ে এগিয়ে গিয়েছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশের এতটুকু অর্জন সম্ভব হয়েছে। আজ বিশ্বের উন্নত দেশগুলো স্বীকার করে শেখ হাসিনার কারনে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল। আজকে যে অর্জন তা বাঙালি জাতির গৌরবের অর্জন। সেই অর্জন শেখ হাসিনা বাঙালি জাতিকে উৎসর্গ করেন। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূল্যবোধ নিয়ে সকলকে ঐক্য গড়তে হবে এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সেই দায়িত্ব পালন করবে। আজকের মতো হেলিকপ্টার-প্লেনে চড়ে আমরা রাজনীতি করতে পারিনি। আজকে আপনারা যে সুযোগ পাচ্ছেন তাকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন।

এদিন বক্তব্যের শুরুতে বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু কোনোদিন পাকিস্তানে বিশ্বাস করে নাই। পাকিস্তান সৃষ্টির পর যখন গণতান্ত্রিক যুবলীগ সৃষ্টি হয় তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যারা স্বাধীন বাংলায় বিশ্বাসীর আন্দোলন করবে তাদের দিয়ে এই গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠন করা হলো।

তিনি বলেন, ৭৫ এর ১৫ আগষ্টের পর যখন আমরা গ্রেফতার হলাম, আমরা জেলখানায় বিভিন্ন জাতীয় দিবসগুলি পালন করতাম। এক আলোচনা সভায় কমরেড মণি বললো, শেখ মুজিবের বক্তব্য তুলে ধরে বললেন, আপনাদের দ্বারা সমাজতন্ত্র হবে না। আপনারা আমাকে সমর্থন দেন, আমি দেশ স্বাধীন করে সমাজতন্ত্র দিব। বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে সংবিধান রচনা করলেন যেই সংবিধানের অন্যতম মূলনীতি ছিল সমাজতন্ত্র। শেখ মুজিবের রাজনীতির সূচনা হয়েছিল এই দেশ স্বাধীন করার সংকল্প নিয়ে।

১৯৪৮ সালে পশ্চিম পাকিস্তানের গভর্নর আলী জিন্নাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যখন ঘোষনা দিলেন উর্দুই হবে রাষ্ট্র ভাষা তখন বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন। পাকিস্তানের জনসংখ্যার শতকরা ৫৬ জন বাঙালি ছিল আর শতকরা ছয়জন ছিল উর্দু ভাষী। এই ছয় জনের ভাষাকে আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে পাকিস্তানিদের পদাঙ্ক অনুসরন করার যে ষড়যন্ত্র সে ষড়যন্ত্র বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেন এবং ছাত্র আন্দোলন শুরু করেন। ১৯৬২ তে আমরা আন্দোলন করেছিলাম হোসেন শহীদ সহোরোওয়ার্দী সহ সকল রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক শাসনতন্ত্রের দাবিতে। বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিয়েছিলেন কিন্তু সেই ছয় দফা গৃহিত হয়নি। তিনি দেশে ফিরে ছয় দফার সমর্থনে আলোড়ন সৃষ্টি করে জনমত গড়ে তুলছিলেন, এরপর বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলেন। এরপর তিনি মুক্তি পেলেন। পরবর্তীতে ১৮ মে ১৯৬৬ তিনি নারায়ণগঞ্জে একটি সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার পর তিনি গ্রেফতার হন। তিনি গ্রেফতার থাকাকালীন অবস্থায় ১৯৬৮ সালে তার বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দেওয়া হয়। এই মামলার পর থেকেই মূলত দেশে অগ্নি বিস্ফোরণ শুরু হয়। ছয় দফা দেওয়ার পরে ডানপন্থীরা বলেছিল এই ছয় দফা সিআইএর দলিল। কিন্তু নানা রকম ষড়যন্ত্র এবং সরকারের হুমকি উপেক্ষা করে এই দেশের মানুষ ছয় দফাকে গ্রহন করে। মনু মিয়াকে যখন গ্রেফতার করে হত্যা করার কথা বলা হয় তিনি বলেছিলেন, আমি বাঁচব না আমি জানি, আমাকে নিয়ে তোমরা মিছিল কর, বাংলার মানুষ রক্ত দেয়া শিখুক। এই ছিল ছয় দফার সেন্টিমেন্ট। এভাবেই বঙ্গবন্ধু বাংলার মাটিতে একক নেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭০ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে বঙ্গবন্ধু যখন এদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী হন। পাকিস্তানিরা জানতো যদি সংসদ অধিবেশন বসে তাহলে ছয় দফার ভিত্তিতে শাসনতন্ত্র তৈরি হবে তাই ইয়াহিয়া খান অধিবেশন বন্ধ করে দিল। বঙ্গবন্ধু আমাদের তৈরি থাকতে বলেছিলেন, আমরা তৈরি ছিলাম। সংসদ অধিবেশন বাতিলের সাথে সাথে দেশের বিভিন্ন জায়গায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনগন বেরিয়ে আসে, পাকিস্তানি পতাকা পোড়ানো শুরু হয়।

বঙ্গবন্ধু কারাগার থেকে বের হয়ে ১৯৬১ সালে যখন টুঙ্গিপাড়া যাচ্ছিলেন তখন বললেন, এবার যা শুরু করবো তা মূল লক্ষ্যে পৌছার জন্য আন্দোলন। তোমরা সবাই প্রস্তুত থেকো। বঙ্গবন্ধু আমদের যেভাবে শিখিয়েছিলেন আমরা সেভাবে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতাম।