মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন বেতনধারী মুক্তিযোদ্ধা। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।
আজ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এ নেতা বিএনপি প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে এমন মন্তব্য করেন ।
আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, আমাদের একটি মুক্তি বাহিনী ছিল। সেই মুক্তি বাহিনীর প্রধান ছিলেন এম এ জে ওসমানি। তার অধীনে দুইজন উপ-প্রধান ছিলেন। একজন রব ভাই আরেকজন এ কে খন্দকার। তাদের অধীনে বাংলাদেশকে এগারোটা সেক্টরে বিভক্ত করে যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছিল শেখ মুজিবের নামে। তেমন একটা সেক্টরে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন জিয়াউর রহমান। শেখ মুজিবের নামে সেই মুক্তিযুদ্ধে বেতনধারী হিসাবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো জিয়াউর রহমান।
আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, কবি হুমায়ূন আজাদ প্রয়াত হয়েছেন ঐ ঘাতক মৌলবাদীদের হাতে। হুমায়ূন আজাদের লেখা “আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম” বইতে তিনি স্মৃতিচারণ করেছেন- ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর এই বাংলাদেশে যত “পাকি” (পাকিস্তানি) সৈন্য নিহত হয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের বন্দুক থেকে যত বারুদ বের হয়েছে, এই নয় মাসে যত স্লোগান আকাশে উত্থিত হয়েছে, তার সবকিছুই একটিনামেই হয়েছে, সেই নাম শেখ মুজিব, সেই নাম জাতির পিতা।”
আমিনুল ইসলাম বলেন, হুমায়ন আজাদ তার বইতে আরেক জায়গায় লিখেছেন এই পৃথিবীতে তাবত বামুন বাঙালিদের মধ্যে শেখ মুজিব একমাত্র বাঙালি যার উচ্চতা আর কোনো বাঙালির নেই। সেই বঙ্গবন্ধুকে ঐ কুলাঙ্গারেরা খুনি জিয়ার সমর্থক সামরিক জান্তা সরকার খুন করে। ভাবখানা এমন দুইজন আসলেন একজন হুইসেল বাজালো দেশটা স্বাধীন হয়ে গেল, আসলে কি তাই! এই দেশের স্বাধীনতার পেছনে শুধু নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধ নয়, তেইশ বছরের সংগ্রাম নয়, দুইশ বছরের সংগ্রাম আছে।
৩১ তম বিজয় মেলা পরিষদের উদ্যোগে ২য় দিনের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম আমিন এসময় বলেন, আমাদের মাঝেই অনেকেই বিতর্ক করেন, জিয়াউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন অথবা বিএনপিতে অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছে। আবার ইদানিং অনেকে বলেন জামায়াতেও নাকি মুক্তিযোদ্ধা আছে!আরেকটি লজ্জার বিষয়, কিছু মুক্তিযোদ্ধা জামায়াত নেতাদের সার্টিফিকেট দেন যে মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি আমাদের সহায়তা করেছিলেন। এমন দিনটি আসবে সেটা আমরা কখনো ভাবিনি।
এসময় আক্ষেপ করে আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম না সেটা আমার সময়ের দুর্ভাগ্য ছিল। মুক্তিযুদ্ধ আমি দেখিনি কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমার মস্তিষ্কের কোষে কোষে কাজ করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আমাদের মতো লাখো আমিনের হৃদয়ে কাজ করে, মগজে কাজ করে। কাজ করে বলেই ৩ নভেম্বর জেলখানার ভিতর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করার পরও বাংলার মাটি থেকে মুজিব আদর্শ যেমন নিশ্চিহ্ন করা যায়নি, মুজিব আদর্শ তেমনি মুছে ফেলা যায়নি।
৭৫ পরবর্তী সরকারের সাথে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ এর আগের সরকারের চেতনাগত কোনো পার্থক্য ছিল না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি অনেক ছোট ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের আগেই আমার বাবা আমাকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলেন। গ্রামের বাড়িতে একটা পুকুর ছিল। দেখলাম আমার বাবা পুকুর পাড়ের একটা গাছের উপর উঠার চেষ্টা করছেন।। মা বললেন “তুমিতো গাছে উঠতে জানো না, গাছে কেন উঠছো?” পরে বাবা বললো “শেখ সাহেবের ভাষণটা আজকে বাজানোর কথা ছিলো কিন্তু বাজালো না।” পরে বয়স হওয়ার পরে জানতে পেরেছি, ৭ মার্চের আগে পাক জান্তারা সেই ভাষণ প্রচার করতে দেয়নি। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, ৭মার্চ সহোরোওয়ার্দী উদ্যান থেকে জাতির পিতার রক্ত উত্তাল করা ভাষণ যদি বাংলার মানুষ শোনে তাহলে বাঙালিকে স্টেনগান, কামান, গোলা বারুদ দিয়ে আর আটকে রাখা যাবে না। তাই সেদিন তারা ভাষণ সরাসরি প্রচার করতে দেয়নি। ৭৫ এর ১৫ আগষ্ট থেকে ৯৬ সালের ১২ মে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হওয়া পর্যন্ত ২১ বছর এই বাংলাদেশের রেডিও, টেলিভিশন, বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ দূরে থাক, জয় বাংলা বলতেও বাঁধা দেওয়া হয়েছিল।