এই ছবির বাড়িটি ধামরাইর শিমুলিয়া গাজী বাড়ির।
মুক্তিযুদ্ধকালীন ২নং সেক্টরের অধিনে ঢাকা উত্তর মুক্তিবাহিনীর একটি ক্যাম্প আমাদের স্থানীয় যুবকদের যুদ্ধের জন্যে অস্ত্রের প্রশিক্ষণের ছবি। ছবিটি তুলেছেন আমাদের সহযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম স্বপন।
৭১ এর সৃতিচারণ এই বাড়িতে আমরা বেশ কিছুদিন ছিলাম তাই অনেক সৃতি প্রতিমুহূর্তের সৃতির অংশ।
১৯৭১ এর নভেম্বরের ২/৩ তারিখ আমরা ক্যাম্প দুজনের দল করে পাহারা দিতাম। গ্রামের চারপাশে গ্রামবাসী আর ক্যাম্পের চারপাশে আমরা ৪ ঘন্টার পালা করে পহারা দিতাম। আমি আর মিরাজ এই টিনের দোতলায় পাশাপাশি বসে পহারা দিচ্ছি। আজকের পালা ছিলো রাত ১০টা থেকে ২টা। পালা শেষে মিরাজ নিচে ঘুমোতে গেলো আর আমি দোতলায় শুয়ে পড়লাম পরনে লুংগি গলায় গামছাটা মাফলারের মত বেধে আর গায়ে হাপ হাতার খদ্দরের ফতুয়া। সারাদিন অস্ত্র পরিস্কার করে স্হানীয়দের সাথে প্রশিক্ষণে সাহায্য অনেক পরিশ্রান্ত ক্লান্ত ছিলাম শোয়া মাত্রই গভীর ঘুম। হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো আমি শীতে কাপছি আর গুমরে গুমরে কাঁদছি, কিছুক্ষণ পর কে যেন একটা ভারি কিছু একটা আমার গায়ে চড়িয়ে দিলো অন্ধকারে কিছুই দেখা যাচ্ছিলো না। আমি ভারি কাপড়টা ধরে অনুভব করলাম তেল চিটচিটে একটা কাঁথা গন্ধে আমার বমি আসছিলো তবুও দমবন্ধ করে গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ভোর ৫ টার দিকে ঘুম ভেঙে দেখি পাশের ঘরে ঘুমিয়ে থাকা এ বাড়ির কামলা (শ্রমিক) আমার কান্না দেখে তার মায়া হলে সে তার গায়ের কাঁথাটা আমার গায়ে দিয়ে সে একটা চাদর গায়ে দিয়ে শুয়ে পড়ে।
নভেম্বর মাস আসলে অনেক সৃতির সাথে এটাও মনে পড়ে।
১৪ নভেম্বর ভয়াডুবি সেতু অপারেশন এ বাড়ির থেকেই রওনা করি সেখানে পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে আমাদের কমান্ডার রেজাউল করিম মানিক শহীদ হন, আমি আর সহযোদ্ধা আলতাফ হাসান টুনি নয়াপল্টনে মানিকের বাসায় এসে মৃত্যুর সংবাদটা দি।
তার মৃতদেহ এখানেই (শিমুলিয়া গাজী বাড়ি) আনা হয়, গোসল ও জানাজা শেষে তার লাশ নৌকা করে নয়ারহাটে এনে সেখান থেকে গাড়িতে করে ঢাকায় আজিমপুরের নতুন গোরস্থান দাফন করা হয়।
সূত্র: বীর মুক্তিযোদ্ধা Mortuza Chowdhury Milan এর ফেসবুক থেকে।