বঙ্গবন্ধু হত্যার পর মহিউদ্দীন চৌধুরীর প্রতিরোধ ও সংগ্রাম

1999
ডান পাশ থেকে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও অমল মিত্র।

১৯৮১ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন দেশে আসলেন তখন সবাই বাকশাল নিয়ে ব্যস্ত। এমনকি পার্টি অফিসও বেদখল, তালা মারা। ঢুকতে পারছেন না। তখন এই মহিউদ্দীনই চট্টগ্রাম থেকে দলবল লাঠিসোটা নিয়ে পার্টি অফিসের তালা ভেঙে অফিস দখল করেছিলেন এবং নেত্রীকে অফিস বুঝিয়ে দিয়েছিলেন।

উনি সেই মহিউদ্দীন, বঙ্গবন্ধু যখন চট্টগ্রামে আসতেন ট্রেন থেকে নেমে প্রথমে জিজ্ঞেস করতেন, ‘আমার মহিউদ্দীন কই?’

উনি সেই মহিউদ্দীন, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি ক্যাম্পে শত নির্যাতনের মুখেও নতি স্বীকার করেননি। নির্যাতনের সময় পিপাসায় পাকিস্থানী মেজরের কাছে যখন পানি চেয়েছিলেন তখন ঐ পাকি মেজর বোতলে করে নিজের প্রস্রাব দিয়েছিলেন। ঐ পরিস্থিতি আপনারা কল্পনা করতে পারেন? তবুও মহিউদ্দীন মুখ খোলেন নি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর জাতির জীবনে নেমে আসে ঘোর দুঃসময়। আকস্মিক ট্র্যাজেডিতে বিপর্যস্ত বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এই বিপর্যস্ত সময়ের মধ্যেও বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন চট্টগ্রামের একদল নেতাকর্মী। সশস্ত্র প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন তারা।

মুক্তিযুদ্ধের আগ থেকেই জ্যেষ্ঠ নেতাদের পাশাপাশি চট্টগ্রামে তরুণ-যুবকদের আরও একটি রাজনৈতিক ধারা সক্রিয় ছিল। তারা ছিলেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির অনুসারী। এই ধারার নেতারা মিলে একাত্তরে জয় বাংলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে তারা চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে কালো পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।

সেই জয় বাংলা স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন তখনকার যুব নেতা মৌলভী সৈয়দ এবং শ্রমিক নেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী। ছিলেন তখনকার ছাত্রনেতা মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, অমল মিত্র, এস এম কামাল উদ্দিন, এস এম ইউসুফ, কাজী ইনামুল হক দানু, সুলতানুল কবির চৌধুরীসহ আরও অনেকে। তাদের ঐক্যবদ্ধ রাজনৈতিক পথচলা অব্যাহত ছিল মুক্তিযুদ্ধের পরেও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন বাকশাল করলেন, তখন শ্রমিক নেতা এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরীকে ১১ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় শ্রমিক ফ্রন্টের সদস্য করা হয়।

১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের রাতে মহিউদ্দীন ঢাকায় কমলাপুরের একটি হোটেলে ছিলেন। ওই রাতের প্রায় ১০টা পর্যন্ত মহিউদ্দীন ছিলেন রাজনৈতিক গুরু শেখ মনির বাসায়, যাকেও রেহাই দেয়নি ঘাতকেরা। মহিউদ্দীন চৌধুরী সেদিন ভাতও খেয়েছিলেন শেখ মনির সঙ্গে। পরদিন সকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন মনসুর আলীকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল মহিউদ্দিনের। সে অনুযায়ী সকালে কমলাপুর হোটেল থেকে বের হয়ে রিকশায় করে তিনি যাচ্ছিলেন মিন্টো রোডে মন্ত্রীর বাসায়।

মহিউদ্দীন বলছিলেন, ‘রিকশায় বসে দেখি চারদিক থমথমে। সকাল ৭টার দিকে হঠাৎ একটি দোকানের ভেতরে রেডিওতে শুনি ডালিমের কণ্ঠ। শুনলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। দিশেহারা হয়ে আমি রিকশা থেকে নেমে যাই। মানুষের কাছ থেকে শুনলাম, মনি ভাইকেও নাকি খুন করা হয়েছে। তড়িৎ গতিতে সিদ্ধান্ত নিলাম, চট্টগ্রাম চলে যাব। ’

তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকেই আমি চট্টগ্রামের জিওসি গোলাম দস্তগীরের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি খুব উত্তেজিত ছিলেন। তিনি বললেন, আপনারা সবাই সংগঠিত হোন, প্রতিবাদ করুন। কিন্তু চট্টগ্রামে যারা সিনিয়র লিডার ছিলেন তাদের অনেকের সঙ্গেই তখন যোগাযোগ করতে পারিনি। প্রায় সবাই আত্মগোপনে ছিলেন। এক সপ্তাহের মধ্যে আমি চট্টগ্রামে ফিরে আসি।’

মহিউদ্দীন জানান, তিনি চট্টগ্রামে ফিরলেন, বিভিন্নভাবে ফিরলেন ঢাকায় থাকা তার চট্টগ্রামের সহকর্মীরাও। প্রথম দিকে তারা বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে মিছিল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু সিনিয়র নেতারা কেউ সায় দিলেন না। বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার সদস্য ফনীভূষণ মজুমদার, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী পটিয়ার সংসদ সদস্য নূরুল ইসলামসহ কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন শেখ মনির সৈনিকেরা। কিন্তু তারা তখন খন্দকার মোশতাক আহমেদের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই নিয়েছেন। তারা প্রতিবাদ করতে অপারগতা জানালেন।

বাধ্য হয়ে শেখ মনির সৈনিকদের অনেকেই ভারতে আশ্রয় নিলেন। মহিউদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা, মন্ত্রীরা সবাই তার অনুগত-এটা বোঝাতে পল্টনে জনসভা ডাকলেন খন্দকার মোশতাক। গোয়েন্দা সংস্থা-পুলিশ-সেনাবাহিনীতে ভরপুর পল্টন ময়দান। আমরা যারা মনি ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতি করতাম তারা বসলাম, কীভাবে জনসভা ভন্ডুল করা যায়। বোমা-গ্রেনেডে কাজ হবে না, সিদ্ধান্ত নিলাম জনসভায় সাপ ছেড়ে দেবো। সিদ্ধান্তটা আমারই ছিল, সবাই লুফে নিল। সাপ জোগাড়ও করলাম। মনি ভাইয়ের বডিগার্ড শাহাবুদ্দিন সাবু’র নেতৃত্বে কয়েকজন গিয়ে সাপ ছেড়ে দিয়ে আসল। মিটিং ছেড়ে সবাই পালাল।

পঁচাত্তরের অক্টোবরে গ্রেপ্তার হয়ে যান মহিউদ্দীন। সামরিক আইনে গ্রেপ্তারের প্রায় ছয় মাস পর রাজশাহী ‍কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। ততদিনে তার রাজনৈতিক সহচরদের অনেকেই চলে গেছেন ভারতে। মুক্তি পেয়ে মহিউদ্দীনও যান সেখানে।

অমল মিত্র বলেন, আগরতলায় ক্যাম্প করে আমরা প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করি। হিমালয়ের তান্দুয়ায় হয় উচ্চতর প্রশিক্ষণ। আওয়ামী লীগের এমপি চিত্তরঞ্জন সুথার আমাদের ভারতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কয়েকজন এমপি’র মধ্যে একজন, যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার সশস্ত্র প্রতিবাদের পরিকল্পনা করেছিলেন। ছিয়াত্তর সালের মার্চে মহিউদ্দীন ভাই গিয়ে আমাদের সঙ্গে যোগ দেন।

সেখানে মৌলভী সৈয়দ, এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী, অমল মিত্র, অমলেন্দু সরকার, সন্তোষ ধর, ফরিদপুরের সালাহউদ্দিন, পটুয়াখালীর বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক খান মোশাররফ, গৌরনদীর সন্তোষ, ফারুক, নড়াইলের শাহজাহান, মাঈদুল ইসলাম, মাহফুজুল আলম বেগ, চট্টগ্রামের এস এম ইউসুফ (ছদ্মনাম ছিল শামীম) সশস্ত্র প্রতিবাদের প্রশিক্ষণার্থীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন।

ভারতে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও তার ভাই শেখ মারুফ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ, বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।

১৯৭৬ সালের ১৭ মার্চ কলকাতার লেকটাউনে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিবসের আয়োজন করা হয়, যেখানে এসেছিলেন শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানাও।

অমল মিত্র বলেন, জন্মদিনে মিলাদের আয়োজন করেছিলাম। মহিউদ্দীন ভাই, আমিসহ কয়েকজন এতে অংশ নিই। আমাদের দেখে শেখ হাসিনা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ওয়াজেদ মিয়া তাকে ধরে আরেক রুমে নিয়ে যান।

প্রশিক্ষণ আর সশস্ত্র প্রতিবাদের কথায় ফেরেন মহিউদ্দীন আর অমল মিত্র।

মহিউদ্দীন জানান, প্রশিক্ষণের সময় সেখানে যান প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী নূরুল ইসলাম। তিনি মোশতাকের পক্ষ ত্যাগ করে গিয়েছিলেন। প্রশিক্ষণরত তরুণ-যুবকরা সবাই মিলে তাকে ধরেন সশস্ত্র প্রতিবাদে যুক্ত হওয়ার জন্য। তিনি বাংলাদেশ থেকে স্ত্রীকে নেওয়ার কথা বলে পালিয়ে যান। মিরসরাইয়ের ফজলুল হক বিএসসি তাদের সঙ্গে যোগ দেন। মোছলেম উদ্দিনও ছিলেন।

‘প্রথমে থানা-ফাঁড়ি আক্রমণ করবো, রাস্তায় রাস্তায় গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটাব। চট্টগ্রাম বন্দরকে নিজেদের আয়ত্তে নেবো। চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করে দেব। এটাই ছিল আমাদের পরিকল্পনা।’ বলেন মহিউদ্দীন।

অমল মিত্র জানান, ১৯৭৭ সালের প্রথমদিকে ‍তারা হাতে তৈরি কিছু গ্রেনেড পাঠান। এস এম কামালউদ্দিনের সেগুলো কৈবল্যধাম থেকে নিয়ে যাবার কথা ছিল।কিন্তু গোলদার নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী সেগুলো চট্টগ্রাম স্টেশনে আনতে গিয়ে ধরা পড়ে যান।

প্রশিক্ষণ নিয়ে কেউ কেউ চট্টগ্রামে ফিরে গ্রেনেড বানাতে শুরু করেন। বলুয়ারদিঘীর পাড়ের আবু তালেব আর আবু কালাম গ্রেনেডগুলো নিজেদের হেফাজতে রাখতেন। আগ্রাবাদ-আন্দরকিল্লায় কয়েক দফা গ্রেনেড বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল। এস এম কামাল উদ্দিন অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন।

মহিউদ্দীন বলেন, বড় কোনো অপারেশন করতে না পারলেও প্রায় প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরে গ্রেনেড চার্জ করা হতো। এতে সরকার আমাদের সশস্ত্র বিদ্রোহের কথা জেনে গিয়েছিল।

১৯৭৭ সালের মাঝামাঝিতে ভারতের রাজনৈতিক দৃশ্যপট পাল্টে যায়। বাংলাদেশেও ক্যু, পাল্টা ক্যু’র ধারাবাহিকতায় ক্ষমতায় আসে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান।

প্রশিক্ষণরত নেতাকর্মীদের অনেককে পুশ ব্যাক করে ভারত। টিকতে না পেরে অনেকেই বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এতে সশস্ত্র প্রতিবাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছেদ পড়ে।

মৌলভী সৈয়দ, মহিউদ্দীন, অমল মিত্র, অমলেন্দু সরকারসহ ৩০-৪০ জন ভারতে থেকে যান। তখন আরও দুঃসহ অবস্থা। সেখানে থাকতে তাদের অনেককে পরিচয় গোপন করতে হয়েছে। কেউ মারা গেলে চুরি করে দাফন করতে হতো। তবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু তাদের সহযোগিতা করেছিলেন, জানান মহিউদ্দীন।

বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করতে হয়েছে তাদের। নেতা হিসেবে সহকর্মীদের থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব এসে পড়ে মহিউদ্দিনের উপর। কলকাতার শিয়ালদহ স্টেশনে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন মহিউদ্দীন। সেটা জানাজানি হয়ে গেলে পেশা পরিবর্তন করেন তিনি। সাঙ্গু ভ্যালি নামে একটি রেস্টুরেন্টে বয় হিসেবে চাকুরি নেন।

‘সাঙ্গু ভ্যালিতে বাম সংগঠন এসইউসি’র কর্মীরা বেশি জড়ো হতেন। তারা বিপ্লবী চেতনায় উদ্বুদ্ধ ছিলেন। অনেকের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠতা হয়।’ বলেন মহিউদ্দীন।

পাশাপাশি আরেকটি হোটেলে ভাত রান্নার চাকুরি নেন। কিন্তু মহিউদ্দীন মুসলমান হওয়ায় তার রান্না করা ভাত খেতে আপত্তি ছিল অনেকের। ব্রাহ্মণ সেজে আরেকটি হোটেলে ভাত রান্নার কাজ নেন মহিউদ্দীন। এরপর পরিচয় গোপন করে মহিউদ্দীন, অমল মিত্র, অমলেন্দু সরকারসহ কয়েকজন মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের সাব-কন্ট্রাক্টরের অধীনে আবর্জনা পরিষ্কারের কাজ নেন। মোটর ওয়ার্কশপেও কাজ করেন কিছুদিন।

‘অমল, অমলেন্দু, সুভাষ, সন্তোষ-এরা আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছে।তারাও আমার সঙ্গে অনেক কষ্ট করেছে। অমল আর অমলেন্দু দু’টাই ছিল বিচ্ছু। তাদের দুষ্টামির জ্বালায় মানুষ রাস্তা দিয়ে হাঁটতে পারতো না।’ বলেন মহিউদ্দীন।

৭৮ সালে মৌলভী সৈয়দ দেশে ফেরার সময় সেনাবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে যান। তাকে নির্মমভাবে গুলি করে খুন করা হয়। ফিরতে গিয়ে অমল মিত্র গ্রেপ্তার হন। হুলিয়া মাথায় নিয়ে ৭৯ সালের দিকে গোপনে দেশে ফেরেন মহিউদ্দীন। জিয়া সরকার শুরু থেকেই তাদের প্রতিরোধের সিদ্ধান্ত নিয়ে সেনাবাহিনী লেলিয়ে দেন।

এর মধ্যেই একদিন ছদ্মবেশে মহিউদ্দীন যান টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর মাজারে।

‘মাজার বলতে কিছু ছিল না। বাঁশের সীমানাও ভালোভাবে ছিল না। যখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়, আমি চট্টগ্রাম থেকে নির্মাণ শ্রমিক নিয়ে যাই। গোপালগঞ্জ তো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো ছিল। ফরিদপুর থেকে ইট আর সিমেন্ট সংগ্রহ করি। বঙ্গবন্ধুর কবর ঘিরে পাকা দেয়াল তুলে দিই। দক্ষিণ কাট্টলী থেকে শ্বেতপাথরে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ লিখে নিয়ে সেটা কবরে লাগিয়ে দিই।

এ পর্যায়ে বলতে গিয়ে আবেগাক্রান্ত হন মহিউদ্দীন। কিছুক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে থাকেন।

বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ ট্রাস্টের সম্পাদনায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড পরবর্তী প্রতিরোধ যুদ্ধ গ্রন্থের ৬১ থেকে ৬৯ পৃষ্ঠায়

‘বিপ্লবের পর প্রতিবিপ্লব হবে, আমরা জানতাম। প্রতিবিপ্লব দমনের একটা প্রস্তুতি, আমরা যারা মনি ভাইয়ের গ্রুপ করতাম, আমাদের মধ্যে ছিল। কিন্তু আমরা বঙ্গবন্ধুকে বাঁচাতে পারিনি। আমাদের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা এটাই।’ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন মহিউদ্দীন।

https://www.liberationwarbangladesh.org/2017/09/blog-post_23.html?m=1

লেখক: রমেন দাশ গুপ্ত, সাংবাদিক।