বিজয় মেলার ৩১ তম আয়োজনে যা থাকছে

416

আপনাদেরকে মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয় সিক্ত সালাম ও অভিবাদন। একটি দুর্বিনীত দুঃসময়ে যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লুন্ঠিত, তখন ১৯৮৯ সালে সার্কিট হাউসের সামনে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংস্কৃতিক সংগঠকদের সাহসী উদ্যোগে এই বিজয় মেলার সূচনা হয়। পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা চট্টলবীর সাবেক সফল মেয়র আলহাজ¦ এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রত্যক্ষ প্রণোদনায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অনুগামী হয়ে পরিণত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায়। এই বিজয় মেলার মূল আদর্শিক লক্ষ্য সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনাকে পুনরুদ্ধার করা। এই বিজয় মেলার সূচনা থেকে বর্তমান পর্যন্ত যারা ওতপ্রোত ভাবে নিবেদিত ছিলেন তাদের অনেকেই আজ না ফেরার দেশে চলে গেছেন, আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমরা যারা কয়েকজন এখনো বেচে বর্তে আছি তারাও একদিন চলে যাবো। তবে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যতদিন বাংলাদেশ থাকবে বাঙালি জাতিসত্তা টিকে থাকবে ততদিন বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা হবেই এবং হবে।

আমরা আপনাদের আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, “মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, বীর বাঙালির অহংকার,” এই স্লোগানকে ধারণ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আরাধ্য সোনার বাংলা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ এবং অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের লক্ষ্যে যে প্রয়াস চলমান রয়েছে তার সাথে একাত্ম হয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা এবার ৩১তম বর্ষে পদার্পন করছে।

আমরা আজ দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা করছি যে, জনগণের সার্বিক মুক্তির জন্য বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনায় ঐক্যবদ্ধ থেকে অসাম্প্রদায়িক শোষণহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের জন্য স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতানা বিরোধী সকল চিহ্নিত অপশক্তির বিরুদ্ধের প্রবল সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নির্ভীক চিত্তে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরে মেধার মনন ও আধুনিক প্রযুক্তি সু-সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশপ্রেমে উজ্জিবীত হয়ে একটি গর্বিত জাতি হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রত্যয় নিয়ে তিন দশকেরও বেশি সময়ের ধারাবাহিকতায় এবারও অনুষ্ঠিত হবে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে মাসব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। আপনারা জানেন, শুরু থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা বাঙালির শৌর্য-বীর্যের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও চিরায়িত সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশের একটি আদর্শিক মঞ্চ হিসেবে প্রজন্ম পরম্পরায় বাঙালি জাতিসত্তার শক্তিকে জাগ্রত করেছে। মাসব্যাপি এই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতিচারণ, মুক্ত বুদ্ধিচর্চাকে শাণিত করে অচলায়নকে চূর্ণ করার মন্ত্র টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে দিয়েছে এবং ইতিহাস বিকৃতির বিরুদ্ধে প্রকৃত সত্যের উজ্জল উদ্ধার করার প্রেরণা যুগিয়ে আসছে।

পাশাপাশি মাসব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় শিশুতোষ ক্রীড়া বিনোদন, দেশীয় পণ্য, কুঠির শিল্প পণ্য, চারু ও কারু শিল্প পণ্য ও লোকজ শিল্প পণ্যের বিপণন ও প্রদর্শনীতে লক্ষ লক্ষ বাঙালির সমাগমে একটি উৎসব মুখর মিলন মেলায় পরিণত হয়ে আসছে। আশা করি এবারও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় বাঙালির প্রাণে প্রাণে মিলন এবং সম্প্রীতির বার্তা উৎসারিত হবে। আমাদের এই আকাঙ্ক্ষার এই বাস্তব প্রতিফলন ঘটিয়ে ১ ডিসেম্বর ২০১৯ রোববার বিকাল ৩টায় নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে মাসব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার শুভ উদ্বোধন সু-সম্পন্ন হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশেনর মাননীয় মেয়র, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আ.জ.ম নাছির উদ্দীন এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নারী নেত্রী মিসেস হাসিনা মহিউদ্দিন।

১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকাল ৩টায় এম.এ আজিজ স্টেডিয়াম চত্বরে বিজয় শিখা প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় মঞ্চের সাতদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার কার্যক্রম শুরু হলো। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হবেন মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রধান উপদেষ্টা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এম.পি। বিজয় মঞ্চের প্রতিদিন কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ও আলোচনা অনুষ্ঠান এবং পরিবেশিত হবে উদ্দীপনামূলক দলীয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও একক সংগীতানুষ্ঠান। ১১ ও ১২ ডিসেম্বর আলোচনা সভা ও স্মৃতিচারণ, ১৩ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪টায় নারী সমাবেশ, ১৪ ডিসেম্বর শনিবার বিকাল ৪টায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে স্মরণানুষ্ঠান এবং ১৫ ডিসেম্বর রবিবার মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার প্রাণ পুরুষ, চট্টলবীর আলহাজ¦ এ.বি.এম. মহিউদ্দিন চৌধুরীর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী পালন উপলক্ষে নাগরিক স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় স্টেডিয়াম চত্বর থেকে একটি বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালী বের হয়ে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় স্টেডিয়াম চত্বরে এসে শেষ হবে।

আমরা মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার বিজয় মঞ্চের কার্যক্রমকে সংক্ষিপ্ত করে আগামী বছর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীকে কেন্দ্র করে জাতীয় ভাবে মুজিব বর্ষ পালনের সাথে সংগতি রেখে বছরব্যাপী প্রণোদনা মূলক অনুষ্ঠানমালা আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। এ সমস্ত অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে উদ্দীপনা মুলক সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত করতে বহুমাত্রিক উদ্যোগ এবং প্রতিযোগিতা মূলক ক্রীড়া, শিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক ইভেন্ট। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক গবেষণামূলক প্রকাশনা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

৩১ তম মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলাকে সকলের সহযোগে পূর্ণ ও সার্থক করতে অতিতের মতো এবারও আপনাদেরকে সহায়ক শক্তি হিসেবে প্রত্যাশা করি। এই মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার কার্যক্রম নাগরিক সমাজের কাছে পৌছে দিতে আপনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা আশা করি। আমরা আপনাদের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলার মিলন উৎসবে মিলে মিশে একাকার হতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানাই।
(মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা উপলক্ষ্যে ৩০ নভেম্বর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের পক্ষে এই লিখিত বক্তব্য পাঠ করনে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদের মহাসচিব, মোহাম্মদ ইউনুছ।