শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জন্য আল-বদর বাহিনী প্রধান নিজামীর মায়াকান্না (ভিডিও)

842

১৯৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বরের দূর্লভ ভিডিও। এদিন একাত্তরের পরাজিত শক্তি জামায়াতে ইসলামির নেতা ও যুদ্ধপরাধি মতিউর রহমান নিজামীকে শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস উপলক্ষ্যে বক্তব্য রাখতে দেখা যাচ্ছে। একাত্তর সালে মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বে আল বদর বাহিনী গঠন করা হয়েছিল। এই আলবদর বাহিনী দেশের স্বনামধন্য বরেন্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল।

৮৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর ধারনকৃত এই ভিডিওতে মতিউর রহমান নিজামী বলেন, একটি জাতির বিবেক হিসেবে বুদ্ধিজীবী সমাজ পরিচিত। শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রকৃত সংখ্যা এখনও নিরূপণ করা হয়নি। বুদ্ধিজীবীদের কে কোথায় কিভাবে শহীদ হয়েছেন তারও কোন কিনারা হয়নি। তাদের পরিবারবর্গও জানতে পারেনি প্রিয় এই মানুষগুলোর লাশ কোথায়? নিজামী বলেন, ১৯৭১ সালে যে সকল বুদ্ধিজীবী দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন গোটা জাতি তাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে চিরকাল।

উল্লেখ্য: একাত্তরে বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মতিউর রহমান নিজামীর নেতৃত্বেই প্রতিষ্ঠিত হয় আলবদর বাহিনী। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে নিজামীর নেতৃত্বাধীন আলবদর বাহিনীর বীভৎস গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগের চালিয়েছে। এ আলবদর বাহিনীই মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাতির সূর্যসন্তান বুদ্ধিজীবীদের নির্মমভাবে হত্যা করে। ইতিহাসের এ জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডেরও নেতৃত্ব দেন নিজামী। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের পর ঘাতক নিজামী আত্মগোপন করেন। জানা যায়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরের পর নিজামী সৌদি আরব পালিয়ে যান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর ১৯৭৭ সালে তৎকালীন সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের আমলে নিজামী ঢাকায় প্রকাশ্যে আসেন। ১৯৭৮ সালে নিজামী জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরীর আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মনোনীত হন। ১৯৮৮ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব লাভ করেন নিজামী। ২০০০ সালে নির্বাচিত হন জামায়াতের আমীর। ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর বেগম খালেদা জিয়া এই কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীর গাড়িতে জাতীয় পতাকা তুলে দেন। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত করে প্রথমে কৃষি ও পরে শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর আন্তর্জাতিক যুদ্ধপরাধ ট্রাইবুনাল গঠন করা হয়। এ ট্রাইবুনালে নিজামীর বিরুদ্ধে থাকা ষোলোটি অভিযোগের মধ্যে ৮টি অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হয়।
যে এর মধ্যে ৪টি অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র সংঘটনের অভিযোগে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বাকি ৮ অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে না পারায় খালাস দেওয়া হয় এই যুদ্ধাপরাধীকে। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১০ মে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাত ১২টা ১০ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর হয়।